আক্রান্ত আঁখি দাসের ফেসবুক থেকে ইস্তফা, আনন্দবাজারের প্রোপাগাণ্ডা বহাল

0
1409

সত্যান্বেষী: “বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয় ” কথাটির তাৎপর্য আবারো প্রমাণ করে দিল কিছুদিন আগের ফেসবুক কর্মী আঁখি দাসের দেওয়া ইস্তফা পত্র। সর্বদা ” ফ্রিডম অফ প্রেসের” বুলি আওড়ানো ভারতীয় রাজনীতির বিরোধী মহল নিজেদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক লাভের তাগিদে এবার “বলির পাঁঠা” হিসেবে তাদের শিকার হিসেবে বেছে নিল জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুক ইন্ডিয়ার চালক বৃন্দের অন্যতম, নয় বছর ধরে কম্পানির সেবা করে যাওয়া এবং রাজনীতি থেকে শতহস্ত দূরে থাকা আঁখি দাসকে।

সম্প্রতি এবিষয়ে বাংলা সংবাদপত্রের তথাকথিত “জায়েন্ট” আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদনটি অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর এবং অতিশয় ভ্রান্ত ধারণায় পরিপূর্ণ।

১। প্রথমে বলি আঁখি দাসের সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাতের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন এবং অপ্রমাণিত। কিন্তু তাঁর বস অজিত মোহন নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্কের কথা। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আছে,

গত মাসের গোড়ায় আঁখি, অজিতকে হাজিরা দিতে হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে।

কিন্তু সেখানে কি কথা হয়েছে আনন্দবাজারের প্রোপাগাণ্ডায় ভরা মুখ বলতে পারে নি। আমরা পাঠককে জানিয়েছি ও আবার জানাচ্ছি। ফেসবুক ভারতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত মোহন সংসদীয় তথ্য প্রযুক্তি কমিটির সামনে স্বীকার করেছেন যে তিনি কেরালায় কংগ্রেস পার্টির সাথে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। ইউপিএ সরকারের সময় পরিকল্পনা কমিশন ও শহুরে উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সাথে মোহনও যুক্ত ছিলেন। সাক্ষাৎকারের সময় তিনি বলেন, তিনি এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের বিরুদ্ধে লেখা সব নিবন্ধ প্রত্যাহার করেছেন।

পাঠক ভেবে দেখুন, যে অজিত মোহন কংগ্রেসের পরামর্শদাতা ছিলেন, কংগ্রেসের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে খোলাখুলি লিখে গেছেন, তিনি হচ্ছেন আনন্দবাজারের নিরপেক্ষ ব্যক্তি। আর যে আঁখি দাস বিজেপি বা কোন পার্টির কাছে এর কোনটাই পান নি, তিনি হচ্ছেন পক্ষপাতী। ধন্য “নিরপেক্ষ” আনন্দবাজারের প্রোপাগাণ্ডা যা আমাদের পক্ষপাতী দৃষ্টি মেলে তবেই দেখা যাবে।

২। আঁখি দাসের উপর আনন্দবাজারের কি রাগ। তাঁর পদ স্বচেষ্টায় অর্জিত নয়, আনন্দবাজার বলছে “পোশাকী”। আর তাঁর বোন যে রাজনৈতিক মতে বিশ্বাসী, আঁখি সেই মতেই বিশ্বাসী হবেন। আঁখি দাস নিত্য হুমকি পাচ্ছিলেন তা আনন্দবাজার ধর্তব্য়ের মধ্যেই আনেনি।

আসলে আঁখি দাসের মত ঘটনাগুলোতে গণতন্ত্র বিপদের মুখে পড়ে না, নারীবাদের প্রসঙ্গও এক্ষেত্রে আসে না। মহিলা যদি স্বপক্ষের না হয়, তাহলে লিবারেলরা তাঁকে আক্রমণ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। মার্কিন মুলুকেও নতুন বিচারপতি নিয়োগ বা যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে (ক্লিনটন/বাইডেন) সুবিধাবাদী উদাসীনতা দেখায় সেই একই মতধারার বর্গ। পক্ষপাতমূলক একতরফা বিচারের রোগ বহনকারী সেই বিশেষ বর্গ তাই আজ পুরো বিশ্বের মানবতার বিরুদ্ধে লড়াই করা এক ক্ষতিকারক শক্তি।

৩। এবার ফেসবুককে নিয়েই দেখা যাক। নিউ ইয়র্ক পোষ্টে দিন কদিন আগে একটি প্রবন্ধ আসে। তাতে দেখা যায়, এনার্জি সেক্টরে কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও জো বিডেনের পুত্র হান্টার বিডেনকে মাসিক ৫০,০০০ ডলার বেতনে বরিশমা বোর্ডে নিয়োগ দেওয়ার এক বছর পরে এপ্রিল মাসে ইমেলটি প্রেরণ করা হয়েছিল। ২০১৪-এ প্রেরিত অন্য ইমেলে দেখা গেছে যে পোজার্সস্কি হান্টার বিডেনকে কোম্পানির স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিতে “কীভাবে আপনার প্রভাব ব্যবহার করতে পারেন সে বিষয়ে পরামর্শ” চেয়েছিলেন। এটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে হান্টার বিডেনকে তার পিতা উপরাষ্ট্রপতি জো বিডেনের প্রবেশের জন্য এই অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।

নিউইয়র্ক পোস্টে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুকের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন একটি টুইট বার্তায় জানিয়েছেন যে ফেসবুক উক্ত পোস্টের প্রচার কম করবে। তিনি বলেছিলেন, “যদিও আমি ইচ্ছাকৃতভাবে নিউইয়র্ক পোস্টের সাথে লিঙ্ক করব না, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে এই গল্পটি ফেসবুকের তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট-চেকিং অংশীদারদের দ্বারা সত্য-পরীক্ষিত হওয়ার যোগ্য।”

দেখাই যাচ্ছে ফেসবুক কি হারে লিবারেলদের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করছে। জো বিডেনের দুর্নীতির কথা বলা প্রতিবেদন লোককে জানাচ্ছে না। সেই পোষ্টের রীচ কমিয়ে দিচ্ছে। পাঠকদের বাংলার কোন মীডিয়ার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তা আশা করি বলে বোঝাতে হবে না। সেই ফেসবুককেই কংগ্রেস ও আনন্দবাজারের বিজেপি পন্থী মনে হচ্ছে!
সবশেষে এটাই বলা চলে যে এভাবে মিডিয়া ট্রায়াল করে কোনো ব্যক্তিকে বলপূর্বক দোষী প্রমাণিত করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। যদিও ভারতবর্ষে কিছু বিশেষ রাজনৈতিক দলের চাটুকারিতা না করলে মেন্টাল হ্যারাসমেন্ট সহ প্রতিদিন চলার পথে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়া এক সর্বজনবিদিত সত্য।