বাংলাদেশে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাঙ্গালী বিজ্ঞান শিক্ষক

0
460

বঙ্গদেশ ডেস্ক:বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসানো হয়েছে‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে ফাঁসানো হয়েছে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে। পূর্ব পরিকল্পনা মতো বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে তা রেকর্ড করে রাখে দশম শ্রেণির ছাত্ররা। পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে ‘ধর্ম নিয়ে কটূক্তি’-র অভিযোগ করা হয়েছে। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, হৃদয় মণ্ডল ভালো শিক্ষক। তিনি হেনস্থার শিকার হয়েছেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু রেকর্ড করা হয়। ছাত্ররা এমনভাবে প্রশ্ন করেছে যেন শিক্ষকের ওইরকম অভিব্যক্তি বেরিয়ে আসে। চক্রান্ত করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, কোনো এক কোচিংয়ের শিক্ষক ছাত্রদের ব্যবহার করে হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসিয়েছে। আর সে কারণে বিজ্ঞান ক্লাসে এক ছাত্র একই ধরনের প্রশ্ন করে শিক্ষককে ফাঁদে ফেলেছে। এমনকি ছাত্ররাও বিক্ষোভও করেছে।

প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এসএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার পর কিছু শিক্ষার্থী আমার কাছে এসেছিল। তারা বলেছিল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তারা স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ শুরু করে।মাইকিং করে বলা হয়, যারা স্কুল ইউনিফর্ম পরে নেই তারা যেন স্কুল থেকে যেন বেরিয়ে যায়। পরিস্থিতির অবনতি দেখে পুলিশকে জানানো হয়।

গত সোমবার (৪ এপ্রিল) মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১-এ শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রবিবার (১০ এপ্রিল) জামিনের শুনানি হতে পারে। হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহিন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ বলেছেন, বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মণ্ডলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় মামলা হয়েছে। আদালত জামিন দিতেও পারে। আমরা গত শুনানিতে জামিন চেয়েছিলাম। কিন্তু জামিন দিলে শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মণ্ডলের জীবনে ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল। তাই আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে যে খবর জানলাম তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একজন শিক্ষক যদি মুক্তভাবে কথা বলতে না পারে, তবে তা খুবই দুঃখজনক।তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, সাম্প্রদায়িক কূপমণ্ডূকতা তরুণ প্রজন্মকে গ্রাস করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হচ্ছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবীর বলেছেন, হৃদয় মণ্ডলকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা তদন্ত করতে হবে। এই ঘটনায় যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এর আগে ষড়যন্ত্র করে পটুয়াখালীতে দেবাশিষকে ফাঁসানো হয়েছিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রসরাজকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনাগুলো বারবারই ঘটছে।