শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত

বাংলা ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত এবং স্বাধীন বাংলদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা

মোঃ নুরুল ইসলাম

[মোঃ নুরুল ইসলাম (হাজী ইসলাম) ১৯৭১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কাঠালিয়া নামক মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা লিডার (অম্বরপুর, চান্দিনা, কুমিল্লা)..বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করেন।]

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এমনই এক ব্যক্তির নাম যা শুধু ২১শে পদক এবং স্বাধীনতার পদক দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখার মত নয়।

আমাদের রাজনীতিবিদেরা মঞ্চে উঠেই এমন বক্তব্য রাখেন যাতে মনে হয় আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকেই মুক্তিযুদ্ধ এবং তারই ফসল হল আজকের এই সার্বভৌম বাংলাদেশ। যদি এই কথাগুলো সত্য হয় তবে ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই হলেন বাংলার প্রকৃত বন্ধু অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু। শুধু তাই নয়। যদি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের সভায় জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা উর্দুর প্রতিবাদ না করতেন তবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হলে আমরা আর বাংলায় কথা বলতাম না। কেননা শাসকগোষ্ঠী ছিল পশ্চিমা উর্দুগোষ্ঠী। বাঙ্গালী মুসলমান নেতৃবৃন্দ উর্দুভাষীদের খয়ের খাঁ বা তল্পিবাহক ছিল – তা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। যদি সেদিন বাঙ্গালী মুসলিম নেতৃবৃন্দের কোন স্বাতন্ত্রবোধ থাকতো তবে ব্রিটিশ ভারত ছাড়ার সময় পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতো না। কিন্তু বাঙ্গালী তথা মুসলিম নেতৃবৃন্দ উর্দুভাষীদের ওপর কোন কথা বলতেন না। ফলে দুই বাংলা ভাগ হয়ে গেল। পাকিস্তানের সাথে যোগ হল পূর্ববঙ্গ যার দূরত্ব মূল পাকিস্তান থেকে ১৪০০ মাইল। সেই দূরত্ব পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ও শোষণ করতে শুরু করল। ১৯৪৮ সালের সেই ২৩শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম সভায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যদি উর্দুর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াতেন তবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হলে হাম সব লোক উর্দুমেই বাত করতাম। কেননা উর্দু দেখতে আরবীর মতো; তাই বাঙ্গালী মুসলমানরা উর্দুকেই আরবীর চাইতে আরো বেশী পবিত্র বলে মনে করতো। তখন বাংলা ভুলে যেত এবং আমরা যে বাঙ্গালী তাও ভুলে যেতাম। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে বাঙ্গালীত্ববোধ থাকতো না, আন্দোলনও হতোনা। ২১শে ফেব্রুয়ারী আমাদের জীবনে আসতো না, ছালম-রফিক-জব্বার ও বরকতদের প্রাণ দিতে হতনা। ২১শে পদকের সূচনা হতোনা। পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হত না। কাজেই আমি মনে করি সবকিছুর সূচনা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই করেছেন।

প্রতি বছরই ক্ষমতাসীনদের যারা দালালি করে তাদের মধ্যে বেছে বেছে বড় বড় দালালদের ২১শে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। যা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি ২১শে পদক ও স্বাধীনতা পদকের প্রতি আর সম্মান ও শ্রদ্ধা মানুষের মধ্যে নাই। আমি বিশ্বাস করি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলেন সেই মহান ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানের জন্মের কয়েকমাসের মধ্যেই ১৪০০ মাইল দূরত্বে পাকিস্তান গণপরিষদে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বীজ রোপন করেছেন। যার শুরু মেজর জিয়া করেছেন এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যার বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন। তার মধ্যে শেখ মুজিব কি করেছেন এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যাহা বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন তার মধ্যে শেখ মুজিব কোথায়? কি তার অবদান? মঞ্চের ভন্ড গলাবাজিতে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হয় নাই।

শেখ মুজিবকে নিয়ে গবেষণা করলে বেরিয়ে আসবে অধ্যাপক গোলাম আযমদের সাথে তার সম্পৃক্ততা। বহু পন্ডিতেরা বলে থাকেন শেখ মুজিব না কি আমাদের বাঙ্গালীর আই. ডি। আমি বলি তাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল। বাঙ্গালীর আই ডি বললে স্বর্গীয় ধীরেন্দ্রনাথকে বলতে হয়। বাংলা তো মুছে যেত। ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে যেদিন আমরা ১৪০০ মাইল দূরে পাকিস্তানের অংশ হলাম। পাকিস্তানিরা তো আমাদেরকে উর্দুভাষী করার জন্য কত চেষ্টাই না করলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন একমাত্র ব্যক্তি – কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যাঁকে বাংলা ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বলা হয়ে থাকে।

অবশ্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেখ মুজিবের জন্মের ৭/৮ বছর পূর্বেই গীতাঞ্জলী লিখে সারা বিশ্বে জানান দিয়েছেন যে তিনি বাঙ্গালী। শুধু তাই নয়। একজন বাঙ্গালী আজ থেকে ১০৬ বছর পূর্বে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে বিশ্বের সবচাইতে মূল্যবান পুরস্কার নোবেল জয় করেছেন। তারপর পাকিস্তান যখন আমাদেরকেও উর্দুভাষী বানাতে চেয়েছিল এই ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রতিবাদের কারণে আমরা বাঙ্গালী রয়ে গেলাম। অন্যথায় হামারা সব লোক উর্দুমে বাত করতো। বাংলা নিয়ে আন্দোলন হতোনা, পূর্ব পাকিস্তান কখনও বাংলাদেশ হতোনা। আমরা শেখ মুজিবেব্র ওপর ভরসা করে থাকলে পূর্ব পাকিস্তান স্বায়ত্তশাসন কতটা পেতো তা জানিনা তবে পাকিস্তানের অধীনে উর্দুভাষীদের বিশ্রী ভাষায় গালাগালি সবই শুনতে হতো। আজকের বিশ্বের মানচিত্রে একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হতোনা। কেননা তা শেখ মুজিবের ডায়রিতে ছিল না এবং তার হাজারো প্রমাণ দিন দিন বেরিয়ে আসছে। তাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ভারতবাসীদের ও তৎকালীন ভারতের লৌহমানবী শ্রীমতী ও মহামতি ইন্দিরা গান্ধীকে যাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তবে, হ্যাঁ দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ নিয়ে ঝগড়া বিবাদ বাধতেই পারে।  তবে, সম্পর্ক নষ্ট হবে না বা নষ্ট হতে দেওয়া যাবেনা। তবে হাসিনার মতে পাকিস্তানের সাথে নয়, মোটেও নয় কারণ হাসিনা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারলে সে কৃতজ্ঞ। ‘৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রিতে দাবড়ানি খেয়ে আমরা ভারতে। পক্ষান্তরে হাসিনার বর্বর পাকিস্তানিদের আদরের মেহমান।  

কথাগুলি কটু লাগতে পারে কিন্তু তা ১০০% বাস্তব ও সত্য। মুজিবপন্থীদের প্রতি প্রশ্ন রইল – আমি যা বলছি তা সত্য না মিথ্যা? প্রমাণ তুলে ধরেন।

রেহানা কয় হাসিনারে – বুবু তুমি ১৬ কোটি লোকেরে খাওয়াইতেছ আর না হয় আরো ১০ লক্ষ (এ যেন রেহানা হাসিনার বাপের জমিদারী থেকে দেশের লোককে খাওয়াচ্ছে)। তারপর বিদেশীরা যেভাবে মাল দিবে বলছে আর দেরী কর কেন? সুযোগটা নিয়ে নাও।  দেখ, বিদেশীরা তোমাকে কিভাবে ভক্তি করে। তারপরও নোবেল হাসিল করার এই একটা উপায়। দেশে যত গুম খুন ও লুটপাট করেছে সব মুছে যাবে। 

তা না হলে এই হাসিনা ও তার দল বলেছিল এরা মুসলিম জঙ্গী, এদেরকে ঢুকতে দেওয়া যাবেনা। এখন শুনি হাসিনা খাইলে রোহিঙ্গারাও খাবে। হায়রে বেহায়াপনার রাজনীতি।

সবশেষে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমি নিম্নের দাবীগুলি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি তুলে ধরলাম:

১) ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারীকে স্মরণ কর শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপর আলোচনা সভা।

২) ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ২১শে পদকটি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পদকে নামকরণ।

৩) জাতির জনক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত/মেজর জিয়া এবং ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা – যাহা বাস্তব সত্য।

৪) ১৯৭১ সালের যে তারিখে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তাঁর ছোট ছেলে দিলীপ দত্তকে বর্বর পাকবাহিনী কুমিল্লা শহরের ধর্মসাগর পাড়ের নিজ বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে ময়নামতি সেনানিবাসে অকথ্য নির্যাতনের মাধ্যমে (পিতা ও পুত্রকে) হত্যা করে সেই ২৯ শে মার্চ শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের তিরোধান দিবস হিসেবে সরকারীভাবে পালন ও স্মরণ সভার আয়োজন করা হোক। অপ্রিয় হলেও সত্য যে যদি আমার দাবীগুলি যথাযথভাবে বিবেচিত না হয় আমি মোটেও বলতে দ্বিধাবোধ করছিনা। যেভাবে আমাদের দেশে নামকরণ, স্থাপনা এবং আরো কতকিছু হচ্ছে যার কোন অবদানই নেই, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের এত বিশাল অবদান থাকার পরও না হলে আমি বলব যেহেতু ধীরেন্দ্রনাথ বাবু মাইনোরিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাই এতো কার্পণ্যতা।

 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: শ্রী সুভাষ চক্রবর্তী (সাধারণ সম্পাদক – নিখিল বঙ্গ নাগরিক সঙ্ঘ)