ফেসবুক-টুইটার তথ্য গোপনের নতুন হাতিয়ার, বলছে আমেরিকার সেনেট

0
428

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- মার্কিন সেনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটি জ্যাক ডরসী এবং মার্ক জুকারবার্গের বিডেন সংক্রান্ত পোস্টে সেন্সরশিপের অভিযোগের বিষয়ে উপযুক্ত সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন পাঠিয়েছে।

নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসী এবং ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিডেন বিরোধী লেখাপত্রের সেন্সরশিপ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে সমন পাঠিয়েছে। অভিযোগ, উভয় প্লাটফর্ম‌ই পক্ষপাতিত্ব করেছে‌। সেই বিষয়ে যথাযথ সাক্ষ্য সেনেট কমিটির সামনে তুলে ধরতে হবে।

নিউইয়র্ক পোস্টের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, কমিটির রিপাবলিকান সদস্যরা ১২-০ ভোটে সমন পাঠানোর পক্ষে ভোট দিয়েছে। অভিযোগ, যে ডেমোক্র্যাট রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জো বিডেনের ছেলে হান্টার বিডেন তাঁর বাবার সাথে একটি ইউক্রেনীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বিডেন সেই সময় উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন।

১৪ ই অক্টোবর তারিখে নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা একটি নষ্ট হয়ে যাওয়া ম্যাকবুক থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে যেটা মেরামত করার জন্য একটি পরিষেবা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যে গ্রাহক ল্যাপটপ নিয়ে এসেছিলেন তিনি আর ল্যাপটপটি ফেরত নেয়নি বা পরিষেবার জন্য টাকাও দেয়নি। দোকানের মালিক জানিয়েছেন, তিনি বারবার ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও ল্যাপটপের মালিক হিসেবে হান্টার বিডেনকে শনাক্ত করা যায়নি, তবে তিনি জানিয়েছেন, ল্যাপটপে বিউ বিডেন ফাউন্ডেশনের স্টিকার আঁটা রয়েছে। রিপোর্টে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এবং একটি ভিডিও দেখানো হয়েছে যা থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে জো বিডেন যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন ইউক্রেনের এক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা করেছিলেন।

অন্যদিকে, নিউইয়র্ক পোস্ট একই তারিখে আরেকটি একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছিল যেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে হান্টার বিডেন তার বাবার পদমর্যাদা ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় সংস্থা বরিশমা-কে চাপ দিয়েছিল তার বেতন বাড়ানোর জন্য। এই প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পাবলিশ হয়েছিল।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই, ফেসবুক এবং টুইটার উভয় মাধ্যম‌ই পোস্টের রীচ কমিয়ে দিয়েছিল। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, প্রতিবেদনটি থার্ড ফ্যাক্টর অথেনটিসিটির আওতায় পড়ে। প্রতিবেদনটি প্রোফাইল থেকে পোস্ট বা শেয়ার করা গেলেও অ্যালগরিদমের আওতায় পড়বে।

টুইটার,আর এক ধাপ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং রিপোর্টগুলি পুরোপুরি তাদের প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের পরে নিউইয়র্ক পোস্টের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। টুইটার কর্তৃপক্ষও টুইটার ব্যবহারকারীর বিডেন সংক্রান্ত পোস্ট রেস্ট্রিকটেড করেছিল, সেন্সরশিপের আওতায় ফেলে ওই প্রতিবেদন সংক্রান্ত পোস্টের গতি মন্থর করেছিল।

সেনেট কমিটিতে বারোজন রিপাবলিকান সমনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দশজন ডেমোক্র্যাট কমিটি কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টে অ্যামি কনি ব্যারেটের মনোনয়নের প্রতিবাদে ভোট দানে বিরত ছিল।

কমিটি নিউ ইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনের রীচ ডাউন ও সেন্সরশিপের কারচুপির অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ দেওয়ার জন্য জ্যাক ডরসী এবং মার্ক জুকারবার্গকে বাধ্য করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। দুজন সিইও-কে দফায় দফায় প্রশ্ন করার জন্য সমন জারি করা হয়েছিল। জিজ্ঞাস্য বিষয়বস্তু গুলো ছিল “অন্য যে কোনও বিষয়বস্তুর সংযোজন নীতি, অনুশীলন, বা ক্রিয়াকলাপের দ্বারা ফেডারেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করতে বা প্রভাবিত করতে পারে।” সেইসঙ্গে উভয় সাইট থেকে সাম্প্রতিক এই সংক্রান্ত পোস্ট রীচ ডাউন বা ব্লক করা হয়েছিল কেন সেই বিষয়ে রথাযথ সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির সদস্য সিনেটর টেড ক্রুজ বলেছেন যে, টুইটার এবং ফেসবুকে আর্টিকেলের ওপর সেন্সরশিপ নির্বাচনী বাধাদানের আওতাভুক্ত। তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দুজন প্রার্থীর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগের আর্টিকেলের ওপর সেন্সরশিপ আগে কখনও দেখিনি।”

মার্ক জুকারবার্গ, জ্যাক ডরসী, এবং গুগলের সিইও সুন্দর পিচাইকে তাদের প্ল্যাটফর্মে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য ও‌প্রমাণ দাখিল করার জন্য ইতিমধ্যে ২৮ শে অক্টোবর সেনেট কমিটি সমন‌ পাঠিয়েছে।