অভিনেতা ধনুশের বক্তব্য থেকে “ওম নমঃ শিবায়”সরিয়ে দিল মিডিয়া! ‘হিন্দুফোবিয়া’-র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ?

0
1393

বঙ্গদেশ ডেস্ক – ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি তাদের রিপোর্টিং থেকে হিন্দু ধর্মের সমস্ত ইতিবাচক উল্লেখ মুছে ফেলার একটা অপচেষ্টা অনেকদিন থেকেই করে চলেছে। হিন্দু সমাজের চিন্তাভাবনার উপরে নিজস্ব ন্যারেটিভ চাপানোর জন্য তাদের এই প্রচেষ্টা হাস্যকর।

অভিনেতা ধনুশ ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি রায়ান গসলিং ও ক্রিস ইভান্স অভিনীত নেটফ্লিক্সের “দ্য গ্রে ম্যান” সিনেমায় অভিনয় করছেন। “এই দুর্দান্ত অ্যাকশন প্যাকড অভিজ্ঞতার অংশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। আপনারা সারা বছর ধরে যে ভালবাসা এবং সমর্থন জুগিয়েছেন তার জন্য বিশ্বজুড়ে আমার প্রিয় ভক্তদের কাছে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি সবাইকে ভালোবাসি। ভালবাসা জ্ঞাপন করছি…! ওম নম: শিবায়।” তিনি টুইটারে একটি পোস্টে লিখেছিলেন।


এটি একটি বড় ঘোষণা ছিল এবং সংবাদটি বেশিরভাগ জাতীয় আউটলেট দ্বারাই প্রকাশিত হয়েছিল। তবে সাংবাদিক স্বাতী গোয়েল শর্মা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, ধনুশের লেখায় যে “ওম নমহ শিবায়” লিখিত ছিল – বিভিন্ন প্রতিবেদনের অনুলিপিতে এর কোনো উল্লেখই ছিল না।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ধনুশের টুইটটি তাদের পোর্টাল থেকেও শেয়ার করেছে এবং “আপনাদের সবাইকে ভালবাসি” অবধি তাঁর উক্তিটি প্রকাশ করেছে। কিন্তু তিনি যে পর্যায়ে “ওম নম: শিবায়” কথাটি বলেছিলেন তার আগেই আর্টিকেলটি শেষ করে দেওয়া হয়।

এভাবে একক ক্ষেত্রে একটি বিচ্যুতি হতে পারে, সম্ভবত কোনও নির্দিষ্ট লেখকের ভাবনাও এর জন্য দায়ী হতে পারে, নিছক ত্রুটিও হতে পারে। কিন্তু এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, একাধিক মিডিয়া এই একই কাজ করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসই একমাত্র আউটলেট ছিলনা যেখানে “ওম নম: শিবায়” রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গেল। ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদনেও একই ঘটনা ঘটে। এমনকি ধনুশের টুইটটি শেয়ার করা হলেও, তাঁর উক্তিটি কেটে দেওয়া হয়েছিল।

ABP -ও ঠিক “ওম নমহ শিবায়” বলার আগেই কোটটিকে কেটে দেয়।

তবে বিষয়গুলি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে যখন নিউজ ১৮ -ও এই সংবাদের উপর একটি প্রতিবেদন লিখেছিল, তবে তিনি “ওম নমহ শিবায়” বলার ঠিক আগেই তারাও ধনুশের উক্তিটি আবার কেটে দেয়।

এখন এটি এমন নয় যে সমস্ত নিবন্ধগুলি একই সিন্ডিকেটেড ফিড থেকে নেওয়া হয়েছিল; ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের নিবন্ধটি তার নিজস্ব বিনোদন ডেস্ককে দিয়ে করানো হয়েছিল, ডেকান হেরাল্ড এবং নিউজ ১৮ -এর প্রতিবেদনে পিটিআই-কে উল্লেখ করা হয়েছে, আর এবিপি নিউজের প্রতিবেদক ‘এবিপি নিউজ ব্যুরো’কে দায়ী করেছেন। তবে এই চারটি প্রতিবেদন এবং পিটিআই সংস্করণ আউটলুক সহ আরও অনেক আউটলেটই “ওম নমঃ শিবায়” কথাটি বাদ দিয়েছে। সমাপতন না ইচ্ছাকৃত, তা পাঠকই ঠিক করুন।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলি কয়েক বছর আগে লিঞ্চিং মামলায় ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করার ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিল, সংবাদপত্রগুলি অভিযুক্তদের পরিচয় হিন্দু হলে বিশেভাবে সচেষ্ট হয় সেটিকে তুলে আনতে। গত বছর রামভক্ত গোপাল নামে এক ব্যক্তি যখন সিএএ-এর প্রতিবাদে গুলি চালিয়েছিলেন, তখন তার হিন্দু পরিচয় তুলে ধরার জন্য মিডিয়া হাউজগুলি সর্বতোভাবো সচেষ্ট হয়।

কোনও চলচ্চিত্র তারকা যখন কোনও বড় প্রকল্পের ঘোষণা করার সময় হিন্দু স্লোগান ব্যবহার করেন এবং তাদের সংবাদ প্রতিবেদনগুলি সেন্সর করে দেয় “ধর্মনিরপেক্ষ” সাজার তাগিদে, তখন মিডিয়ার এই আচরণটি ইচ্ছাকৃত কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে একটি বিষয় সুস্পষ্ট – ভারতের হিন্দুরাই দেশের জাতীয় মিডিয়া হাউজগুলির কাছে বারংবার বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।