পুরাতন স্লাভ ধর্ম এবং ভারতের বৈদিক ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক ২

0
813

ডঃ রাস্তকো কোস্টিচ

(প্রথম পর্বের পর)

পাশ্চাত্যের স্লাভ প্যানথিয়নের অন্যান্য দেবতারাও কম আকর্ষণীয় ছিলেন না। রুজেন দ্বীপে কমপক্ষে ছয়জন দেবদেবীর পুজোর প্রচলন ছিল। তাঁরা ছিলেন: রুজভিট, যার অর্থ “রুজেনের, রুজেন দ্বীপের অধীশ্বর”, যাঁর সাতটি মাথা ছিল ও তাঁর কোমরবন্ধনীতে সাতটি তলোয়ার ছিল ও ডান হাতে অষ্টম তরোয়ালটি ধরে রাখা ছিল। এছাড়াও ছিলেন পোরেভিট, যাঁর পাঁচটি মাথা ছিল। তারপর সম্ভবত সর্বাধিক আকর্ষণীয় স্লাভ দেবতা ছিলেন পোরেনট যাঁর অর্কোনাযর মূর্তির চারটি মাথা ছিল ও তাঁর বুকে অপর একটি মাথা ছিল; তাঁর বাম হাতটি তাঁর পঞ্চম মুখটি স্পর্শ করে ছিল এবং তাঁর ডান হাতটি তাঁর শ্মশ্রু স্পর্শ করে ছিল‌। ধর্মীয় ঐতিহাসিকরা সাধারণত এই ঈশ্বরের ধ্যানমগ্ন চেহারা দেখে বিভ্রান্ত হয়ে যান। কেউ কেউ তাঁকে শপথের দেবতা হিসাবে ব্যাখ্যা করেন, আবার কেউ কেউ তাঁকে মঙ্গলের দেবতাও বলে।

তারপরে আছেন চেরনোগ্লাভও, তিনিও রুজেন দ্বীপের বাসিন্দা ছিলেন (যা স্লাভ পৌত্তলিক ধর্মের এক প্রকারের মাউন্ট অথোসের মত পবিত্র ছিল) যার নামের অর্থ ছিল “কালো মাথাওয়ালা” এবং যাঁর রূপালী গোঁফ ছিল; পিজামার মন্দিরটি রুজেন দ্বীপের সবচেয়ে সুন্দর অংশে তথা জেসমুন্ড বনে অবস্থিত ছিল, যেখানে ঝরা পাতাগুলি শরৎকালে লাল রঙের হয়; মাতৃদেবী বাবা-র কথা (“ঠাকুমা”)  আমরা জানি, তিনি রুজেন দ্বীপের বোবিনে তাঁর পুজো পেয়েছিলেন। আমাদের মহান দেবতা ত্রিগলভ (“তিনটি মাথাওয়ালা”) রয়েছেন শেজেসিনে, অধুনা পোল্যান্ডে তাঁর একটি ঘোড়াও ছিল , যদিও তাঁর ঘোড়াটি স্বেটোভিডের থেকে আলাদা ছিল, এটির রঙ ছিল কালো (কিছু বিজ্ঞানী এই কারণেই যেমন রিব্যাকভ ট্রিগ্লাভকে “অস্তগামী সূর্যের দেবতা” হিসেবে ও  স্বেটোভিড-কে “উদীয়মান সূর্যের দেবতা” হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন।)

ত্রিগলভের মূর্তিটি সোনা দিয়ে নির্মিত, এবং একটি সোনার রূমাল তাঁর চোখ এবং ঠোঁটকে ঢেকে রাখত। পৌত্তলিক পুরোহিতরা এই বিবরণগুলি এইভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে: তাঁর মহান ঈশ্বরের তিনটি মাথা রয়েছে, কারণ তিনি তিনটি মহান রাজ্য শাসন করেন — স্বর্গ, পৃথিবী এবং নরক; তাঁর মুখ একটি রুমাল দিয়ে ঢাকা থাকে যাতে তিনি পুরুষদের পাপগুলি দেখতে বা জানতে না পারেন। এছাড়াও অন্যান্য পশ্চিমী স্লাভ দেবতাও রয়েছে যেমন র‍্যাডেগাস্ট (যাঁর অর্থ “প্রিয় অতিথি”), তিনি ভবিষ্যদ্বাণী ও যুদ্ধের দেবতা। আমরা ব্রেমেনের অ্যাডামের উপাখ্যানে তাঁর মন্দির-শহর রেট্রার বর্ণনা খুঁজে পাই : “তাঁর মূর্তিটি সোনার তৈরি এবং তাঁর মন্দিরটি বেগুনি রঙে রঞ্জিত ছিল”।

শহরের নবম গেটটি শুধুমাত্র একটি কাঠের সেতু দিয়ে ব্যবহার করা যেত যা কেবলমাত্র যাঁরা নৈবেদ্য আনেন বা দৈববাণির উত্তরগুলি সন্ধান করেন, তাঁরাই এটি পার হয়ে যেতে পারতেন…” তারপরে আমাদের কাছে রয়েছেন প্রেপাগালা, যিনি ঘোর খ্রিস্টান বিরোধী ঈশ্বর, যাঁকে অত্যন্ত রক্তপিপাসু হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে কারণ তাঁর ভক্তরা তাঁর কাছে খ্রিস্টানদের বলি দিতেন এবং খ্রিস্টীয় মধ্যযুগের উপাদান অনুযায়ী পুরোহিতরা প্রতিটি জয়ের পরে চিৎকার করতেন: “আনন্দ কর, কারণ খ্রিস্টানরা পরাজিত হয়েছে! (“এই ভয়াবহ লোকেরা অর্থাৎ স্লাভরা আমাদের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে। তারা তাদের মূর্তিপূজা দিয়ে খ্রিস্টানদের গীর্জাগুলিকে অশুচি করে দিয়েছিল। তারা আমাদের দেশে বানের জলের মতো ভেসে এসেছিল… তারা খ্রিস্টানদের মাথা কেটে ফেলত এবং তাদের ভোগ হিসাবে নিবেদন করত … তারা তাদের মন্দিরের সামনে রক্তে পরিপূর্ণ পেয়ালা রাখত এবং তাদের চারপাশে চিৎকার করে উল্লাস করত: আনন্দ করুন, কারণ খ্রিস্টানরা পরাজিত হয়েছে; এই বিজয়ের কাণ্ডারী হলেন প্রিয়পেগালা।”)

এছাড়াও এখানে বনের দেবতাও ছিলেন প্রোভ (স্লাভ ধর্মের সারমর্ম ছিল প্রকৃতির উপাসনা)। দেবীদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণগুলি ছিলেন: ঝিভা, ক্রনিকার হেলমোল্ডের দ্বারা বর্ণিত (ঝিভা, ঝিভেনা, মানবজীবন এবং প্রকৃতির দেবী)। ফল অফ আরকোনা বইতে অর ট্যুইলাইট অফ স্ল্যাভিক হিথেনিজমে মার্কিন ভাষাতত্ত্ববিদ রিচার্ড স্টোনির একটি লেখা রয়েছে যা স্লাভ দেবী ঝিভা এবং ভারতীয় দেবতা শিবের মধ্যে  একটি সংযোগসূত্র স্থাপন করেছে। তারপরে আরও রয়েছেন দেবী লাডা (সৌন্দর্যের দেবী), মোরানা (শীত ও মৃত্যুর দেবী) এবং ভেসনা (বসন্তের দেবী)। আমরা এখানে থেমে যাব যাতে আমরা এর থেকে আরও বেশি গভীরে না চলে যাই, কারণ বেশিরভাগ পাঠকের কাছে এই বিষয়টি একেবারেই অপরিচিত।

এখানে আমাদের আরো কিছু যোগ করতে হবে। কিছু মানুষ এই বইটিকে খ্রিস্টানবিরোধী হিসাবে গণ্য করতে পারেন কারণ এটি সত্যিই মূলত ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা পশ্চিমী মানুষ, পৌত্তলিকতাবাদী, স্লাভ, ও  ওয়েন্ডস-এর ভূমিকা সম্পর্কিত নথিবদ্ধ প্রমাণ সরবরাহ করে। এই ঘটনাগুলির মধ্যে সর্বাধিক এবং প্রধান ভূমিকা ছিল মধ্যযুগের বিখ্যাত ক্যাথলিক সাধক, ক্লেয়ারভাক্সের সেন্ট বার্নার্ড-এর। ১১৪৭ খ্রিস্টাব্দে পোপ তৃতীয় ইউজিনের আদেশে তিনি জার্মান পুরোহিত এবং অভিজাতদের কাছে নিম্নলিখিতগুলি (তাঁর চিঠিতে প্রমাণ হিসেবে) লিখেছিলেন: “স্লাভিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ করুন এবং উইন্ডদের সঙ্গে কোনরকম সন্ধি স্থাপন করবেন না বা আত্মসমর্পণ গ্রহণ করবেন না বা কোনও আদমশুমারিও করবেন না, যতক্ষণ না সেই লোকদের বা তাদের সকলের (ওয়েন্ডস) ধর্ম নাশ হয়ে যায়।” আমি আবারও বলছি, এটি ছিল ১১৪৭ সাল।

একই চিঠির অন্য বাক্যে তিনি বলেছেন: “খ্রিস্টানদের সশস্ত্র সৈন্য ফ্র্যাঙ্কফুর্টে তাদের (ওয়েন্ডস) এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই জাতিকে সমগ্রভাবে বিলুপ্ত (ধ্বংস) করার জন্য অথবা তাদের নির্বিচারে খ্রিস্ট ধর্মে রূপান্তরিত করার জন্য আমরা আমাদের হাতে ক্রস তুলে নিয়েছি”। অতএব, আমরা এখানে একটি হিংসাত্মক রূপান্তরণের সম্পূর্ণ সুযোগ দেখতে পাচ্ছি। আয়ারল্যান্ড বাদে, এমন কোনও ইউরোপীয় দেশ নেই যেখানে খ্রিস্টধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে কোনো রক্তপাত ছাড়াই এসেছে। এর জন্য সেন্ট প্যাট্রিককে ধন্যবাদ । এটি কেবলমাত্র একটি ঐতিহাসিক সত্য। পাশাপাশি বলে রাখা ভালো, ক্যাথলিক আইন অনুসারে ক্লেয়ারভাক্সের সেন্ট বার্নার্ডের স্লাভদের জোর করে খ্রিস্টানে পরিণত করার কোনও অধিকার ছিল না; সেন্ট অগাস্টিন ৪০০ এর জায়গায়  কাছাকাছি লিখেছেন যে পৌত্তলিকতাবাদীদের ধর্মান্তকরণ কেবলমাত্র তাঁদের ইচ্ছার বিনিময়ে করা যাবে।

১১৪৭ এবং তার পরবর্তী ধর্মযুদ্ধগুলিকে পশ্চিমী ধর্মযুদ্ধ (উইন্ডিশ ক্রুসেড) বলা হয় এবং ১২৪২ সালে পুরাতন রাশিয়ার আক্রমণের ফলে এটি শেষ হয়েছিল। এটাই ছিল একমাত্র অ-পৌত্তলিক দেশ যেখানে ক্যাথলিক ব্যাপটিস্টরা আক্রমণ করেছিল এবং তারা সেই যুদ্ধটিতে চুডস্কো হ্রদে আলেকজান্ডার নেভস্কির কাছে পরাজিত হয়েছিল। অথচ ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা লুশাতিয়ান সার্ব, ওবোট্রিটি, লিভোনিয়ান, ফিনীয়, এস্তোনীয়, পুরাতন প্রুশিয়ান এবং লিথুয়ানিয়ানদের (উত্তর ক্রুসেড) বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছিল।

আমাদের ইতিমধ্যে উল্লিখিত তথ্যগুলি বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত স্লাভ পৌত্তলিকতাবাদ এবং ভারতের প্রাচীন ধর্মের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে আর কী কি যুক্ত করার আছে? আমাদের সনাতন বিশ্বাস অবশ্যই ভারতের প্রাচীন ধর্মগুলি থেকে জন্মগ্রহণ করেছে, আমাদের পৈতৃক ভিটা, ঠিক যেমন স্লাভ জাতির উৎসও ভারত। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত স্লোভাকিয়ান ভাষাবিদ প্যাভেল সাফারিক লিখেছেন: “… ভোটের অধিকারের নিরিখে বিশেষজ্ঞদের প্রমাণপত্র অনুসারে সবথেকে সতর্ক ও গভীর ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণার ফলাফল (সিএফ। জেএস ভ্যাটারস অ্যানালেকটেন আই হাফ্ট। ৩- ৪৮), স্লাভ জাতীয় উপজাতির পুরাতন ক্ষেত্র হিসাবে ভারত ও পার্সিয়াকে চিহ্নিত করে।

সাধারণ জ্ঞানের দ্বারা পোষিত মতামতের ভিত্তিতে বিশ্বের হিন্দু মানুষদের নাম, যাঁরা তাঁদের নাম ও অস্তিত্বের জন্য সিন্ধু নদীর গভীর নীল জলের কাছে ঋণী এবং তৎসহ পরবরতী কালের স্লাভ মোরাবিয়ান, পোলাব, পোমোরান, পোস্যাভাক, ক্রোনাক, টিমোচিয়ান, নেরেচিয়ান, বোব্রান, বুজান (পুকিন), হ্যাভেলান, জিজেরাটেসিয়ান (এজারেইটি) এবং রাসিসিয়ান, রাতজি, ডোন, সুলিচ প্রভৃতি নাম এসেছে অন্যান্য, সমস্তগুলি নদী, হ্রদ এবং উপকূলরেখার নাম থেকে, ন্যূনতম উদাহরণ হিসাবে পাওয়া যায় কিছু কিছু জিনিস যাহা প্রকল্পটিকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করে এবং  যার বিকল্পগুলির মধ্যে একটি হওয়া ছাড়া আর কিছুই দরকার নেই। আমার মতে, আমি তাঁদের মতামতের সঙ্গে সহমত যেমন- জে জংম্যানের মতো মানুষ যাঁরা উইন্ড নামটিকে হিন্দু, গ্রীক ό ‘Ινδός,’ Ινδικος, ή ‘Ινδική, লাতিন সিন্ধু, ইন্দো, ভারত, হোন্ডার হিব্রু, আরবি হিন্দ, ইথিওপীয় হেন্ডে, পার্সিয়ান হিন্দ (বহুবচন হুনুদ) –এ বিবেচনা করেছিলেন।

এর থেকে বলা যায় যে, যদিও আমাদের জ্ঞান অনুযায়ী স্লাভরা নিজেরাই এই নামটি ব্যবহার করেনি, এটি কেবল একটি সাধারণ ভৌগোলিক শব্দ নয়, একটি বংশগতভাবে নির্ধারিত একটি শব্দ এবং যা তাঁদের পূর্বপুরুষের যুগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন ধরণের রূপ: ইন্দ, হিন্দ, হেনেতি, এনেট, হেনেটি, ভেনড, ভিন্ড, অ্যান্ট প্রভৃতি অবশ্যই আমাদের বিভ্রান্ত করবে না; একটি জাতির নাম পৈতৃক ভিটা থেকে পর্যন্ত মুছে ফেলা ও বিশ্বের দুটি অংশে বিভিন্ন লোক এবং ও বিভিন্ন ভাষার লোক -এই দুটোকে কখনোই সমান বলে মনে করা যায় না; এক্ষেত্রে ভল্চে, ভ্যালোন, গ্যালি, গালাতাই, কেলটাই, সেল্টেন-এর রূপগুলির চেয়ে তাদের বিচ্যুতি বড় নয়, যা ভাষাতাত্ত্বিক গবেষকরা সর্বসম্মতভাবে একই শব্দের বিভিন্নতা বলে দাবি করেছেন”।

 

স্লাভ এবং ভারতীয় উভয়েরই সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতাদের বহু শিরের অস্তিত্ব একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা (কিছু গবেষকের মতে, ব্রহ্মার সাথে স্বেটোভিডের অনেক সাদৃশ্য; ত্রিগলব শিবের একটি রূপের মত দেখতে ও পোরেনট, যিনি সম্ভবত ছিলেন রুজেনে আবিষ্কৃত ধ্যানের স্লাভ ঈশ্বর, দ্বি-মস্তকযুক্ত দেবতা, যাঁকে ভারতীয় অগ্নির মতো দেখায় ইত্যাদি)।

 

আমি বন্য শুয়োরের উপকথাগুলিতে স্লাভ-ভারতীয় সমান্তরালতার দিকেও নজর দিচ্ছি যা তরঙ্গাকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং মানবতার ত্রাণকর্তা হিসাবে বিবেচিত হয়। দীর্ঘকালীন থিয়েটমার স্লাভদের মধ্যে এবং ভারতীয়দের মধ্যে এই শুয়োরের কথা বলেন, সেই শূকরটি বরাহ নামে বিষ্ণুর তৃতীয় অবতার রূপে পরিচিত। এরপরে দ্বাদশ শতাব্দীর মহান জার্মান বিজ্ঞানী জ্যাকব গ্রিম উল্লেখ করেছিলেন যে স্লাভ দেবতা সিটিভ্র্যাট হলেন ভারতীয় সত্যব্রতের একটি সংস্করণ, তিনি সূর্য বংশের রাজা, গিলগামেশের মহাকাব্য উতনাপিষ্টিমের ভারতীয় সংস্করণ, অথবা বাইবেল থেকে পাওয়া গেছে নোয়াহ। স্লাভ শব্দ “বোগ” এর ব্যূৎ পত্তি রয়েছে ভারতীয় দেবতা ভাগের মধ্যে, যাঁর নামের অর্থ ধন, সমৃদ্ধি, সুরক্ষা। ঋকবেদের গর্জনের দেবতা পার্জন্যার উৎপত্তি নিঃসন্দেহে পেরুনের সাথে সম্পর্কিত।

কারও মতে, দক্ষিণী সার্বরা যে “স্লাভা” উদযাপন করে, তা হ’ল বৈদিক ধর্ম এবং আমাদের প্রাচীন অস্তিত্বের দুর্ধর্ষ উদাহরণ, কারণ বৈদিকরাও একইভাবে উদযাপন করেছিল; সর্বোপরি, তাঁরা দেবদেবীদের উদযাপন করেছিল কেবল বিরল, প্রতীকী রূপে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির জন্য তাঁরা প্রার্থনা করত, যথা – স্বাস্থ্য, ভাল ফসল ইত্যাদি। উত্তর ইরানের সিথিয়ানরা, যাঁরা অনেক মূল স্লাভের সমতুল্য ছিলেন, তাঁদের একটি ধর্ম ছিল যা বৈদিক ধর্মের সাথে অনেকটা মিল সম্পন্ন, যেমন- সূর্য উপাসনা, সোমরস পান এবং বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতি নির্দিষ্ট উচ্চারণের, যেগুলি বৈদিক এবং স্লাভ ধর্মের চেয়ে বেশি আদর্শযুক্ত ছিল, উদাহরণস্বরূপ,পারসিকরা (যাঁরা স্লাভ ধর্মের উপরেও তাঁদের চিহ্ন রেখেছিলেন)। এর বাইরেও পৌত্তলিক স্লাভরা বন, ঝরণা, পাহাড়, নদী, তীর, পাখি, গরু, ঘোড়া ইত্যাদিকে পবিত্র বলে গণ্য করেছিলেন, ঠিক যেমন ভগবান গীতাতে কৃষ্ণ বলেছেন (“আমি হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে… স্থাবর বস্তুগুলির মধ্যেও আমি আছি) অশ্বত্থ… ঘোড়ার মধ্যে আমি উচ্চৈশ্রবার মধ্যে, গরুদের মধ্যে, কামধেনুর মধ্যেও আছি…”।) কয়েক দশক আগে, ২০০৭ সালে, আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, বিষ্ণুর একটি মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল রাশিয়ার প্রাচীনতম শহর, ভোলগা নদীর উপর স্টারায়া মায়নাতে। সতীপ্রথার প্রচলন যার মধ্যে একজন বিধবা তার স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় চিতায় বসে নিজে আত্মবিসর্জন করেছিলেন, আরবীয় ভ্রমণকারী আল মাসাউদি দশম শতাব্দীতে আদি স্লাভদের দ্বারাও এটি অনুশীলন করা হত এমন বর্ণনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত, আমরা যগ করি যে ঐতিহাসিক দলিলগুলি নিশ্চিত করে যে পৌত্তলিক স্লাভও পুনর্জন্মে বিশ্বাস করএনন, যেমনটি রাশিয়ান প্রিন্স ইগর এবং বাইজেন্টাইনদের মধ্যে ১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির দ্বারা প্রমাণ হয়েছিল। যা বলে যে: “যারা এই চুক্তি ভঙ্গ করে, সেই স্লাভরা পরের জীবনে দাস হয়।”

এবং এই পাঠ্যের একেবারে শেষের জন্য: ২০০৯ সালে আন্ডারহিল দ্বারা বংশগতির গবেষণা করা হয়েছিল হ্যাপলগ্রুপ আর১এ১এ সম্পর্কে এবং তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে ভারতীয় এবং স্লাভরা নিকটতম আত্মীয়, পাশাপাশি দক্ষিণ-এশীয় সম্প্রসারণ দক্ষিণ-ইউরোপীয় অঞ্চলের চেয়ে প্রাচীন, যা প্রমাণ করে যে আজকের বেশিরভাগ স্লাভ মানুষেরা ভারতীয় বংশধর।

এই পাঠ্যটি যা উল্লেখ করেছে তার সবকিছুই দ্য ফ্যাল অফ আরকোনার অর দ্য ট্যুইলাইট অফ স্লাভিক হিথেনিজম বইযয়ে লেখা হয়েছে যা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন -অ্যামাজন, গুগল প্লে, অ্যাপল বইয়ের পাশাপাশি বেলগ্রেড ভিত্তিক পেপারব্যাকে ইংরেজিতে পাওয়া যায়, যার প্রকাশক এটিস-ডিকে।

(সমাপ্ত)

মূল লেখাটি লিখেছেন ডঃ রাস্তকো কোস্টিচ। ডঃ রাস্তকো কোস্টিচ হলেন সার্বিয়ার বেলগ্রেডের একজন ধর্মীয় ঐতিহাসিক। অনুবাদ করেছেন অঙ্কুশা।